রোজা ভাঙার কারণ | রোজা রেখে কি কি কাজ করা যাবে না | রোজা রাখার উপকারিতা

    রোজা ভাঙার কারণ | রোজা রেখে কি কি কাজ করা যাবে না | রোজা রাখার উপকারিতা

    রোজা ভাঙার কারণ সমূহ

    আগামী এপ্রিল মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই পবিত্র মাহে রমজান শুরু হচ্ছে। ইসলাম ধর্মে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সুবহে সাদিক হতে সূর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার থেকে এবং খারাপ কাজ  হতে বিরত থাকা হলো সিয়াম বা রোজা। রোজা রাখার পর এমন কোন কাজ করা যাবে না যেগুলোর মাধ্যমে আপনার রোজা ভেঙ্গে যেতে পারে। তাই রোজা রাখতে হলে আপনাকে কিছু বিষয় অবশ্যই মেনে চলতে হবে। তাই চলুন রোজা ভাঙ্গার কারন এবং রোজা থেকে কি কি করা যাবে না। এই নিয়ে আজকের বিস্তারিত আলোচনা

    খাবার গ্রহণ  বা ধূমপান

    রোজা থাকা অবস্থায় যদি কেউ খাবার গ্রহণ করে এবং ধূমপান করে তাহলে তার রোজা ভেঙ্গে যাবে। আপনি যদি লুকিয়ে অথবা প্রকাশ্যে যেকোনো মাধ্যমেই খাবার খেয়ে ফেলেন অথবা ধূমপান করেন তাহলে আপনার প্রজা ভেঙ্গে যাবে। কারণ আপনার খাবার গ্রহণ বা ধূমপান করলে কেউ দেখুক বা না দেখুক আল্লাহ ঠিকই দেখছেন। তবে কেউ যদি অনিচ্ছাকৃত ভাবে খাবার গ্রহণ করে ফেলে সে ক্ষেত্রে তার রোজা ভাঙবে না। সে ভুল বুঝার পরে কুলি করে ফেললেই হবে। তাই আপনি যখন বুঝতে পারবেন যে আপনি ভুলবশত কিছু খেয়ে ফেলেছেন তখন একবার কুলি করে ফেলুন


    অসতর্কভাবে অজু করলে

    ওযু করার সময় অবাঞ্ছিত কথাবার্তা বলা যাবে না। আর নাকে এবং মুখে পানি দেওয়ার সময় হালকাভাবে ধৌত করতে হবে অন্যান্য সময়ের মতো গরগরা কুলি করা অথবা নাকের নরম স্থান পর্যন্ত পানির প্রয়োজন নেই। সে ক্ষেত্রে এইগুলা হালকাভাবে করে নিতে হবে আর আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে যাতে আপনার ভিতরে কোন ভাবেই পানি প্রবেশ না করতে পারে। এক্ষেত্রে যদি আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে কুলি করার মাঝে খেয়ে ফেলেন তখন কিন্তু রোজা ভেঙে যাবে


    স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হওয়া যাবে না

    রোজা থাকা অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হওয়া যাবে না এটা সম্পূর্ণভাবে বিভিন্ন হাদিস নিষিদ্ধ করা হয়েছে। কারণ রোজা থাকা মানে শুধু পানাহার থেকে বিরত থাকা না নিজেকে শারীরিকভাবেও বিভিন্ন তৃপ্তি থেকেও বিরত রাখতে হবে। তাই কেউ যদি রোজা থাকা অবস্থায় সহবাস করে তাহলে তার রোযা ভেঙ্গে যাবে এক্ষেত্রে তাকে পুনরায় কাফফারা ও কাজা রোজা দুটোই আদায় করতে হবে। তাছাড়া আপনি রাতের সময় আপনার স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হতে পারবেন কিন্তু কখনোই রোজা থাকা অবস্থায় মিলিত হতে পারবেন না


    রোজা থেকে বমি হলে কি হয়

    রোজা থেকে বমি হলে আপনার রোজা টা ভাঙ্গেনা। সে ক্ষেত্রে যদি আপনি ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করে থাকেন তাহলে কিন্তু আপনার রোজা ভেঙ্গে যাবে। আর যদি স্বাভাবিকভাবে আপনার বমি হয় সেক্ষেত্রে আপনার রোজা ভাঙবে না। তবে বমি হওয়ার পরে অবশ্যই আপনাকে কুলি করে নিতে হবে এবং মুখ ভালো করে ধুয়ে ফেলতে হবে। যাতে মুখের ভিতরে কোথাও খাবার লেগে না থাকে


    রোজা থাকা অবস্থায় হস্তমৈথুন

    রোজা থাকা অবস্থায় যদি হস্তমৈথুন করে থাকেন তাহলে অবশ্যই আপনার রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং আপনি বড় ধরনের পাপ করে ফেলবেন। হস্তমৈথুন করা ইসলামে সম্পূর্ণভাবে হারাম করেছে আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন তাই এটা শুধু রমজান মাস উপলক্ষে না। সবসময়ের জন্যই আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন কি হারাম করেছেন। তাই রোজা থাকা অবস্থায় হোক আর অন্যান্য অবস্থায় হোক হস্তমৈথুন একেবারেই হারাম


    মেয়েদের ঋতুস্রাব

    মেয়েদের ঋতুস্রাব হয় সেক্ষেত্রে রোজা ভেঙ্গে যাবে। রোজা থাকা অবস্থায় যদি কোন মহিলার মাসিকের দেখা দেয় তাহলে সে তাৎক্ষণিক রোজা ভেঙ্গে ফেলতে পারবে এবং খাবার গ্রহণ করতে পারবে। তাছাড়া আর যদি প্রসাবের সাথে রক্ত বের হয় তবুও রোজা ভেঙ্গে যাবে। এক্ষেত্রে যে কয়টি রোজা ভেঙ্গে যাবে সেগুলো পুনরায় পরবর্তী সময়ে সেগুলো করে নিতে হবে


    রোজা থাকা অবস্থায় ইনজেকশন 

    রোজা থাকা অবস্থায় কোনো ব্যাক্তি যদি শরীরে ইনজেকশন দিয়ে থাকে তাহলে তার রোযা ভেঙ্গে যাবে। কেউ যদি ইনজেকশনের মাধ্যমে শরীরের জীবনী শক্তি বাড়াতে চাই এবং এর জন্য যদি ইনজেকশন পুশ করে সে ক্ষেত্রে তাঁর রোজা কি ভেঙ্গে যাবে


    রোজা রাখার উপকারিতা

    রোজা রাখলে কেমন পরকালের জন্য ভালো তেমনি ইহকালের জন্য অনেক উপকারিতা রয়েছে। রমজানের রোজা রাখলে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে যেমন শারীরিক সুস্থতার কার্যকর হল একটি ব্যবস্থাপনা। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে যারা সেহরী এবং ইফতারের পরিমিত মাকে খাবার খান। এবং অতিভোজন করে না থাকেন তারা রোজা রাখার ফলে শারীরিকভাবে অনেক উপকৃত হয় এবং মানসিক ভাবেও শান্তি অনুভব করতে পারে


    আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু সাল্লাম বলেছেন প্রতিটি বস্তুর যাকাত আছে এবং শরীরের যাকাত আছে সেটা হল রোজা প্রত্যেকটি মুসলমানের জন্য রোজা রাখা ফরজ একটি ইবাদত। তাই আসুন আমরা সবাই সিয়াম পালন করি এবং পরকালের জন্য নেক আমল আদায় করি


    রোজা করে রাখার ফলে আমাদের ইউরিক অ্যাসিড এবং রক্তে ইউরিয়ার সুজুকি অনেকাংশে কমে যায় যায় এগুলো শরিলে অধিকমাত্রায় থাকলে স্ট্রোক হূদরোগ কিডনি রোগ এবং ডায়াবেটিস সহ বিভিন্ন রোগের মাত্রা বেড়ে যায়। কিন্তু রোজা রাখলে তা এগুলো থেকে অনেকটা কমে যায়


    বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে খেজুরে ভিটামিন এবিসি এবং ডি থাকে পাশাপাশি ক্যালসিয়ামসহ স্টল ফসফরাস এবং অনেক দরকারী খনিজ রয়েছে এই খেজুরের মধ্যে হৃদপিণ্ড মস্তিষ্ক লিভার পেট স্নায়ু মজবুত রাখে এবং শরীরে প্রচুর পরিমাণ শক্তি তৈরি করে


    রোজা রাখার দোয়া

    অনেকেই রোজা রাখার দোয়া জানেনা তাই আজকে আমরা এখানে নিচে রোজা রাখার দোয়া দিয়ে দিলাম। নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম মিন শাহরি রমাদ্বানাল মুবারকি ফারদ্বল্লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাক্বব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আনতাস সামীউল আলীম।


    রোজা ভঙ্গের কারণ স্বপ্নদোষ

    রোজা থাকা অবস্থায় যদি কারো স্বপ্ন দোষ হয়ে থাকে সে ক্ষেত্রে তা বোঝার কিছু হবে না তবে উঠে তাৎক্ষণিকভাবে কুলি করে গোসল করে নিতে হবে। এবং অজু সহকারে গোসল করতে হবে এবং আপনার নাপাক স্থানে ভালো মতো করে পরিষ্কার করে গোসল করে নিবেন। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে হস্তমৈথুন করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে


    রোজা রেখে নখ কাটা যাবে

    রোজা থাকা অবস্থায় নও কতবার চুল কাটা যাবে। তবে সে ক্ষেত্রে যদি ইচ্ছাকৃত ভাবে তার নখ বা চুল কাটা কাটা অংশ গিলে ফেলে এবং সেটি যদি পেটে প্রবেশ করে তাহলে তার রোযা ভেঙ্গে যাবে। তাই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। আর স্বাভাবিক ভাবে চুল অথবা নখ কাটলে রোজার কোন ক্ষতি হবে না


    রোজা থেকে চুল কাটা যাবে

    হ্যাঁ রোজা থেকে চুল কাটা যাবে। তবে সেই ক্ষেত্রে সাবধানতার সাথে চুল কাটতে হবে যাতে কোথাও কেটে না যায় এবং রক্তপাত না হয়। যদিও রক্তপাত হয় তার পরেও রোজার কোন ক্ষতি হবে না অস্বাভাবিক ভাবে রক্ত পড়লে এবং আপনি অজ্ঞান হয়ে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। তবে রোজা থাকা অবস্থায় চুল কাটা যায়। এবং আপনার গোপন লোম যদি 40 দিনের বেশি হয় তারপরেও সেগুলো কাটতে পারবেন


    রোজা থেকে গান শোনা যাবে

    না রোজা থেকে কোন রকমের বাদ্যযন্ত্র এর গান শোনা যাবে না তবে ইসলামিক ওয়াজ অথবা ইসলামী গানগুলো শোনা যাবে। এবং কোরআন তেলাওয়াত শোনা যাবে। তবে রমজান মাসে সবথেকে বেশি বেশি কুরআন তেলাওয়াত করা উচিত কারণ রমজান মাসে একটা হরফের জন্য আল্লাহ অধিক মাত্রায় সব দিয়ে থাকেন


    রোজা থেকে স্বপ্নদোষ হলে

    রোজা থাকা অবস্থায় যদি স্বপ্নদোষ হয় সেক্ষেত্রে রোজার কোন ক্ষতি হবে না। যদি স্বপ্নদোষ হয় সে ক্ষেত্রে আপনাকে উঠে অজু করে গোসল করে নিতে হবে এবং আপনার নাপাকি জায়গায় ভালো মতো পরিষ্কার করে নিতে হবে। এবং ভালোভাবে কুলি করতে হবে


    রোজা থেকে রক্ত দেওয়া যাবে

    রোজা থাকা অবস্থায় রক্ত দেওয়া যাবে। কারণ রোজা থাকা অবস্থায় কোনো কিছু গ্রহণ করলে অথবা ভিতরে প্রবেশ করালে সে ক্ষেত্রে রোজা ভেঙ্গে যায় কিন্তু রোজা থাকা অবস্থায় কিছু বের করা হলে রোজা ভাঙবে না


    রোজা রেখে কি গেম খেলা যাবে

    রোজা রেখে গেম খেলা যাবে না। রোজা বছরে একটি মাত্র মাসে পালন করার সুযোগ পাওয়া যায়। আল্লাহ পাক রব্বুল আলামীন আমাদেরকে সুযোগ করে দিয়েছে বেশি বেশি সওয়াব হাসিল করার জন্য। এই মাসে যে যত বেশি ইবাদত করতে পারবে তার দ্বিগুন পরিমান সওয়াব পাবে। তাই রোজার মাসে এ সমস্ত গেম ভিডিও গেমস অথবা মুভি সিনেমা থেকে বিরত থাকা সর্বোত্তম। আর এগুলা কোন সময়ই হালাল বলে গণ্য হয় না তাই এগুলান এড়িয়ে চলাই উত্তম। তাই সবাই চেষ্টা করবেন রোজা থাকা অবস্থায় গালিগালাজ না করা এবং গেম খেলা


    যারা গেম খেলে তাদের বিষয়টি পুরোপুরি একটু ভিন্ন রকম। রাত জেগে গেম খেলতে হয় শরীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয় এবং তারা মানসিক সমস্যায় ভোগেন। এমনকি তাদের ভাষাগত প্রবলেম হচ্ছে দিন দিন। তারা খারাপ ভাষা গুলো আয়ত্ত করে ফেলে এবং সেগুলো ব্যবহার করে। তাই উচিত যদি সম্ভব হয় গেম থেকে একেবারে বিরত থাকা। আর রোজা থাকা অবস্থায় তো খেলা যাবে না যেকোন ভিডিও গেমস অথবা অনলাইন গেমস। তাই সবাই চেষ্টা করবেন এই সমস্ত দেশ গুলো থেকে বিরত থাকা


    আপনি কি মোবাইল দিয়ে টাকা ইনকাম করতে চান

    সরকারি কম্পিউটার কোর্স 2022 | সরকারি অর্থায়নে ফ্রি কম্পিউটার আইটি কোর্স ২০২২

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    Post a Comment (0)

    নবীনতর পূর্বতন