মহিলাদের মধ্যে এইচআইভি লক্ষণ

    মহিলাদের মধ্যে এইচআইভি লক্ষণ

    মহিলাদের মধ্যে এইচআইভির লক্ষণগুলি পুরুষদের মধ্যে এইচআইভির লক্ষণগুলির অনুরূপ হলেও, কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে যা মহিলাদের জন্য বিশেষভাবে প্রযোজ্য। এই লক্ষণ গুলো জানা থাকলে আপনারা খুব সহজে বুঝতে পারবেন আপনার এইচআইভি হয়েছে কিনা এবং সাধারণত এই লক্ষণগুলো দেখা দিলেই যে এইচআইভি হবে তা কিন্তু নয় এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে


    আজকে আমরা বিস্তারিতভাবে এইচআইভি পজেটিভ কিনা এবং এটা থেকে কিভাবে রক্ষা পাওয়া যায় এবং কিভাবে বুঝবেন একটি মহিলা এইচআইভি আক্রান্ত তাহলে চলুন পর্যায়ক্রমে এই বিষয়গুলো নিয়ে একটি বিস্তারিত আলোচনা দেখে নেওয়া যাক


    এইচআইভি সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে:

    জ্বর: এটি প্রায়শই এইচআইভি সংক্রমণের প্রাথমিক লক্ষণ এবং এটি কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে। এটি স্থায়ী হতে পারে এবং এর সাথে অন্যান্য লক্ষণ গুলো দেখা দিতে পারে যেমন বমি হওয়া অথবা অতিরিক্ত মাথা ব্যথা করা এই সমস্যাগুলো দেখা ও দিতে পারে


    ক্লান্তি: এটি একটি দীর্ঘস্থায়ী ক্লান্তি যা অন্যান্য কারণ দ্বারা সহজেই ব্যাখ্যা করা যায় না।
    লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া: ঘাড়, বগল এবং কোমরের লিম্ফ নোডগুলি ফুলে যেতে পারে এবং স্পর্শে নরম হতে পারে। অতিরিক্ত হাঁটাচলা করলে অথবা সিড়ি ব্যবহার করে যাতায়াত করলে কিন্তু এই সমস্যা দেখা দেয়


    মহিলাদের মধ্যে এইচআইভি লক্ষণ

    গলা ব্যথা: এটি প্রায়শই জ্বরের সাথে থাকে এবং কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে। গলার ভিতরে ব্যথা হতে পারে এক্ষেত্রে পানি পান করা বা খাওয়ার সময় এই ব্যথাগুলো অনুভব করতে পারবেন তাছাড়া নরমাল সময়ও যদি আপনি শ্বাস নিতে চান তখন ও ব্যথা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে


    পেশী ব্যথা: এটি সাধারণত পেশীগুলিতে ব্যথা এবং দুর্বলতা হিসাবে বর্ণনা করা হয়। হাঁটাচলা করলে অথবা অধিক পরিমাণ ওজনের জিনিস তুলতে গেলে কিন্তু বেশি ব্যথা দেখা যেতে পারে যদি এইচআইভি আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে কিন্তু বেশি ব্যথা হতে পারে


    মাথাব্যথা: এটি একটি সাধারণ লক্ষণ যা অন্যান্য অনেক অবস্থার কারণেও হতে পারে। মাথাব্যথা একটু অন্যতম কারণ যদি এইচআইভি আক্রান্ত মহিলা হয়ে থাকে তাহলে কিন্তু অবশ্যই মাথা ব্যাথা আরো দীর্ঘ হতে থাকে


    ফুসকুড়ি: এটি বিভিন্ন আকার এবং আকারের হতে পারে এবং শরীরের যে কোনও জায়গায় দেখা দিতে পারে। শরীরের গোপনীয় জায়গায় এই সমস্যাগুলো বেশি দেখা দেয় তাছাড়া রক্তেও বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে


    ওজন কমে যাওয়া: এটি ক্ষুধামান্দ্য বা অন্যান্য কারণ দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না।
    মহিলাদের মধ্যে কেবলমাত্র লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে। দ্রুততার সাথে ওজন কমে যায় এবং রক্তে এই সমস্ত ভাইরাসগুলো দ্রুত আক্রান্ত হয়ে পড়ে


    মাসিক চক্রের পরিবর্তন: অনিয়মিত রক্তপাত, ভারী রক্তপাত, বা দীর্ঘস্থায়ী রক্তপাত হতে পারে।
    যোনি থেকে খামির সংক্রমণ, ব্যাকটেরিয়াল ভ্যাজিনোসিস, বা অন্যান্য সংক্রমণের কারণে হতে পারে। এক্ষেত্রে ঘন ঘন মাসিক প্রক্রিয়া দেখা দিতে পারে। এটি শরীরের বিভিন্ন রক্তশূন্যতার কারণেও এমন সমস্যা হতে পারে


    তলপেটে ব্যথা: এটি PID, এন্ডোমেট্রিয়োসিস, বা অন্যান্য অবস্থার কারণে হতে পারে।
    যৌন মিলনের সময় ব্যথা: এটি যোনি শুষ্কতা, সংক্রমণ, বা অন্যান্য অবস্থার কারণে হতে পারে। অথবা নরমাল সময় যদি মূত্র ত্যাগ করতে যাওয়া অথবা যৌনাঙ্গের নরমাল নাড়াচাড়া করার কারণেও কিন্তু এমন ব্যথা দেখা দিতে পারে


    মহিলাদের এইচআইভি আক্রান্তের উদাহরণ:

    25 বছর বয়সী একজন মহিলা কয়েক সপ্তাহ ধরে জ্বর, ক্লান্তি এবং লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়ার অভিজ্ঞতা করছেন। তিনি পরীক্ষা করান এবং এইচআইভি পজিটিভ বলে প্রমাণিত হয়। দীর্ঘক্ষণ জ্বর লেগে থাকলে অথবা মাথা ব্যথা বা অন্যান্য লক্ষণ গুলো দেখা দিলেও কিন্তু হয়ে থাকে


    35 বছর বয়সী একজন মহিলা অনিয়মিত রক্তপাত এবং ভারী রক্তপাতের অভিজ্ঞতা করছেন। তিনি পরীক্ষা করান এবং এইচআইভি পজিটিভ বলে প্রমাণিত হয়। তবে এক্ষেত্রে সবগুলোই যে একই ধরনের লক্ষণ দেখা দিলেই এই এইচআইভি আক্রান্ত হবে তা কিন্তু না


    45 বছর বয়সী একজন মহিলা তলপেটে ব্যথা এবং যৌন মিলনের সময় ব্যথা অনুভব করছেন। তিনি পরীক্ষা করান এবং এইচআইভি পজিটিভ বলে প্রমাণিত হয়। না এমন লক্ষণ দেখা দিলেই যে এইচআইভি হবে তা কিন্তু না। এইচআইভি হওয়ার জন্য আরো অন্যান্য লক্ষণ আছে এবং সেই সাথে রক্তের আরো কয়েক ধরনের টেস্ট করার পরে বোঝা যায়


    এইডস কত দিন পর ধরা পরে

    সংক্রমণের ধরন:
    তীব্র সংক্রমণ: কিছু লোক সংক্রমণের ৬ থেকে ৭ সপ্তাহ পরে "তীব্র সংক্রমণ" নামক একটি অসুস্থতার অভিজ্ঞতা পায়। এই অসুস্থতায় জ্বর, গলা ব্যথা, মাথাব্যথা, ফুলে ওঠা লসিকা গ্রন্থি, ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে। এই সময়, এইচআইভি পরীক্ষায় পজিটিভ ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।


    এইচআইভি লুকিয়ে থাকা সংক্রমণ: অন্যরা "লুকিয়ে থাকা সংক্রমণ" নামক অবস্থার অভিজ্ঞতা পায়, যেখানে তাদের কোন লক্ষণ দেখা দেয় না। এই ক্ষেত্রে, এইচআইভি পরীক্ষায় পজিটিভ ফলাফল পাওয়ার জন্য বেশি সময় লাগতে পারে। তবে এই সমস্ত ভাইরাসগুলো বা সংক্রমণগুলো ধরা অনেকটাই কঠিন তাই অবশ্যই ভালো চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ধারণা নিতে হবে


    পরীক্ষার ধরন:

    এন্টিবডি পরীক্ষা: এই পরীক্ষাটি রক্তে এইচআইভির বিরুদ্ধে তৈরি অ্যান্টিবডিগুলি সনাক্ত করে। সংক্রমণের ৪ থেকে ৬ সপ্তাহ পর এই পরীক্ষাটি পজিটিভ ফলাফল দেখাতে পারে। কয়েক ধরনের টেস্ট করা হয় এক্ষেত্রে কয়েকদিনব্যাপী সময় লাগতে পারে ফলাফল পাওয়ার জন্য তাই অবশ্যই অপেক্ষা করুন


    NAAT পরীক্ষা: এই পরীক্ষাটি রক্তে এইচআইভির ভাইরাল লোড (RNA) সনাক্ত করে। সংক্রমণের 10 থেকে 14 দিন পর এই পরীক্ষাটি পজিটিভ ফলাফল দেখাতে পারে। তবে এক্ষেত্রে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী এই পরীক্ষাগুলো করা উচিত


    ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা:
    শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিরা লক্ষণ দেখাতে দীর্ঘ সময় নিতে পারে এবং তাদের এইচআইভি পরীক্ষায় পজিটিভ ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা কম হতে পারে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক অংশে কমে গিয়ে থাকে তাই অবশ্যই সেই অনুযায়ী ট্রিটমেন্ট নেওয়া উচিত


    সাধারণভাবে:
    6 থেকে 7 সপ্তাহ: তীব্র সংক্রমণের ক্ষেত্রে, এই সময়ের মধ্যে এইচআইভি পরীক্ষায় পজিটিভ ফলাফল পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি।


    4 থেকে 6 সপ্তাহ: এন্টিবডি পরীক্ষা এই সময়ের মধ্যে পজিটিভ ফলাফল দেখাতে পারে।
    10 থেকে 14 দিন: NAAT পরীক্ষা এই সময়ের মধ্যে পজিটিভ ফলাফল দেখাতে পারে।


    6 মাস: নিশ্চিত ফলাফলের জন্য, 6 মাস পর এইচআইভি পরীক্ষা করা উচিত।


    • এই সময়সীমাগুলি কেবলমাত্র অনুমান।
    • এইচআইভি সংক্রমণের ঝুঁকি থাকলে, দ্রুত পরীক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ।
    • এইচআইভি নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কার্যকর চিকিৎসা উপলব্ধ।
    • আপনার ডাক্তার বা স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর সাথে কথা বলুন।


    এইডস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পায় কত মাসে

    এইডস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে কত মাস লাগবে তা নির্ভর করে বেশ কিছু বিষয়ের উপর। তাৎক্ষণিকভাবে কখনোই এইচআইভির রোগ প্রকাশ পায় না এক্ষেত্রে কয়েক ধরনের টেস্ট করা লাগে এবং রোগীর শরীরের অবস্থা এবং অন্যান্য লক্ষণ গুলো দেখেই তারপরেই নির্ধারণ করা হয় মহিলাটি এইচআইভি পজিটিভ কিনা


    প্রধান বিষয়গুলি হল:
    মহিলা ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা: শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের লক্ষণ দেখাতে দীর্ঘ সময় লাগতে পারে। কিছু ধরনের ভাইরাস অন্যদের তুলনায় দ্রুত অগ্রসর হয়।


    অ্যান্টিরেট্রোভাইরাল থেরাপি (ART) এইচআইভি ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং লক্ষণ প্রকাশের সময় দীর্ঘায়িত করতে পারে।


    কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস: কিছু লোক সংক্রমণের কয়েক সপ্তাহ বা মাসের মধ্যে লক্ষণ দেখাতে শুরু করে। তবে এক্ষেত্রে এই সমস্ত লক্ষণ গুলো দেখা দিলেই তৎকালীনভাবে বিভিন্ন টেস্ট করে বিষয়টা নিশ্চিত করতে হবে


    অনেক বছর: শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং ART-এর সাহায্যে, অনেক লোক লক্ষণ দেখা দেওয়ার আগে অনেক বছর ধরে এইচআইভির সাথে বেঁচে থাকতে পারে।
    10 বছর: গড়ে, ART ছাড়া এইচআইভি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের লক্ষণ দেখা দিতে 10 বছর সময় লাগে। এর থেকে বেশি সময় লাগতে পারে তবে তার আগে কখনোই ভালো ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া নিশ্চিত হওয়া যাবে না


    মহিলাদের এইচআইভির কিছু সাধারণ লক্ষণ হল

    • জ্বর
    • ক্লান্তি
    • লিম্ফ নোড ফুলে যাওয়া
    • ওজন কমানো
    • দীর্ঘস্থায়ী ডায়রিয়া
    • রাত ঘুমাতে অসুবিধা
    • মুখে ঘা
    • ত্বকের সমস্যা
    • গলা ব্যথা
    • পুসকুনি ওঠা
    • তলপেট ব্যথা
    • যৌনাঙ্গ ব্যথা


    এই সবে আক্রান্ত মহিলারা যদি অন্য কারো সাথে মেলামেশা করে অথবা সেক্সচুয়াল সম্পর্ক করে থাকে সেক্ষেত্রেও কিন্তু এই রোগ গুলো আরো বেশি ভাবে সরাতে থাকবে। ব্যক্তিদের সাথে কোন ধরনের প্রটেকশন ছাড়া যদি কেউ মেলামেশা করে তাহলে তাদের মাধ্যমে কিন্তু এইচআইভি সরানোর সম্ভাবনা থাকে এবং এইচআইভি মহিলা যদি বাচ্চাকে দুধ খাওয়ায় তার মাধ্যমেও কিন্তু এইচআইভি ছড়িয়ে যাবে তাই অবশ্যই এ বিষয়ে সতর্ক থাকা জরুরী

    একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

    Post a Comment (0)

    নবীনতর পূর্বতন