বিবাহ হলো পবিত্র বন্ধন। কিন্তু এই পবিত্র বন্ধন দাম্পত্য জীবনে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে থাকে যেখানে তালাক একমাত্র সমাধান হয়ে দাঁড়ায়। আর স্বামী যখন বিদেশে অবস্থান করে তখন এই তালাক প্রক্রিয়াটা কিছুটা জটিল হয়ে যায়। এই বিদেশ থেকে তালাক দেওয়ার প্রক্রিয়াটা অনেকেই জানে না। তাহলে বিদেশ থেকে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার নিয়ম কি চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।
বিদেশে দীর্ঘদিন যাবৎ আছেন কিন্তু দাম্পত্য জীবনে দুজনের মধ্যে দূরত্ব বেড়ে গেছে, আপনি কি জানেন বিদেশ থেকে আইনসম্মত ভাবে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার সঠিক নিয়ম রয়েছে। তাই এখানে আপনারা জানতে পারবেন বিদেশ থেকে স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার সঠিক নিয়ম ও পদ্ধতি।
বিদেশ থেকে তালাক দেওয়ার নিয়ম
বিদেশ থেকে স্ত্রীকে তালাক দিতে হলে সরকারের নির্দিষ্ট আইন ও নিয়ম মেনে তালাক দিতে হয়।বাংলাদেশে স্ত্রীকে তালাকের আইনি প্রক্রিয়ায় মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশ, ১৯৬১ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। বিদেশে থাকা অবস্থায় তালাক কার্যকর করতে কিছু ধাপ অনুসরণ করা জরুরি।
তালাক দেওয়ার প্রধান কারণ
সমাজের জ্ঞানী মানুষদের মতে বিবাহবিচ্ছেদের প্রধান কারণ গুলোর মধ্যে রয়েছে:
- পরকীয়া
- গৃহ নির্যাতন
- যৌতুক
- স্বামী দীর্ঘদিন বিদেশ থাকা
- দাম্পত্য জীবনে অসুখী
বেসরকারি একটি জরিপ অনুযায়ী জানা গিয়েছে যে স্বামী দীর্ঘদিন প্রবাসে থাকার কারণে ৪৫ ভাগ বিবাহিত নারী পরকিয়ায় জড়িয়ে পড়ে। মূলত এই কারণেই স্বামীকে তালাক দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এছাড়াও আরো নানা ধরনের কারণ থাকতে পারে, কোন কোন সময় ছেলের পক্ষ থেকেও মেয়েকে হয়রানির জন্য তালাক দিয়ে থাকে।
আরো দেখুন: বোয়েসেলের মাধ্যমে ফিজিতে উচ্চ বেতনের চাকরির সুযোগ
বিদেশ থেকে তালাক দেওয়ার ধাপ
১. পাওয়ার অব অ্যাটর্নি (আমমোক্তারনামা) তৈরি করুন
স্বামীকে বিদেশ থেকে তালাক কার্যকর করতে হলে প্রথমে দেশে থাকা একজন বিশ্বস্ত আত্মীয় কে তালাক প্রদানের জন্য দায়িত্ব দিতে হবে। যাকে বলা হয় পাওয়ার অব অ্যাটর্নি বা আমমোক্তারনামা। এটি একটি আইনত দলিল।
১৯৭৯ সালের উপ ধারা অনুসারে কোন ব্যক্তির পক্ষে হাজির হয়ে যে সকল কার্যাবলী সম্পাদন করার ক্ষমতা দেওয়া হয় তাকে আমমোক্তারনামা বলে। এবং সেই অনুসারে এটার বৈধতা রয়েছে।
২. আইনজীবীর মাধ্যমে নোটিশ ও আমমোক্তারনামা করুন
- দেশে অবস্থিত কোন আইনজীবীকে নিয়োগ করুন।
- আইনজীব এর মাধ্যমে তালাকের নোটিশ তৈরি করুন।
- তালাকের জন্য পরিচিতদের মধ্যে আমমোক্তারনামা কে হবে নির্বাচন করুন।
৩. নোটিশ ও আমমোক্তারনামা বিদেশ সত্যায়ন
- আমমোক্তারনামা ও তালাকের নোটিশে স্বাক্ষরের জন্য আপনাকে বিদেশি নেটারি পাবলিক, ম্যাজিস্ট্রেট, বা বাংলাদেশের দূতাবাসের কনস্যুলারের সামনে গিয়ে সরাসরি স্বাক্ষর করতে হবে।
- সংশ্লিষ্ট দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থাকে নোটিশ সত্যায়িত করান।
- পরবর্তী সে নোটিশ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিন।
৪. বাংলাদেশের আইনগত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করুন
- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিতে হবে।
- জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্ট্যাম্প করুন।
- তালাকের নোটিশ স্ত্রী ও সংশ্লিষ্ট ইউপি চেয়ারম্যান কে পাঠান।
- ৯০ দিনের মধ্যে তালাক কার্যকর হয়ে যাবে।
বিদেশ থেকে তালাক কার্যকরের সময়সীমা
- স্ত্রী পুনরায় বেয়ে বিয়েতে পারবে না
- দুজনেই তালাক প্রত্যাহার করার সুযোগ পাবেন
- তালাক কার্যকর হলে রেজিস্টার (কাজী) দ্বারা নিশ্চিত করে নিতে হবে
বিদেশ থেকে তালাক দেওয়ার খরচ
বিদেশ থেকে তালাক দেওয়ার পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হলে একজন আইনজীবীর সহায়তা নিতে হয়। তালাক প্রক্রিয়ার খরচ নিম্নলিখিত খাত গুলোর উপর নির্ভর করে:
- আইনজীবী ফি: একজন আইনজীবী নিয়োগ করতে হলে সাধারণত ১০ হাজার টাকা থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ লাগে, এই খরচ মূলত আইনজীবীর অভিজ্ঞতা অনুযায়ী নির্ভর করে।
- নেটারি ও সত্যায়ন ফি: বিদেশি নেটারি পাবলিক বা দূতাবাসে কাগজপত্র সত্যায়নের জন্য ৫ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ লাগে।
- স্টাম্প ডিউটি: জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্টাম্প বাবদ ২০০ টাকা লাগে।
- ডাক যোগাযোগ ও অন্যান্য খরচ: তালাকের নোটিশ এবং অন্যান্য কাগজপত্র পাঠানোর জন্য ২ হাজার টাকা থেকে ৫ হাজার টাকা লাগে। এই খরচ জায়গা ভেদে ভিন্ন হতে পারে।
বিদেশ থেকে তালাক দেওয়ার সতর্কতা
- মধ্যপ্রাচ্যে থাকলে দেশে এসে তালাক দিতে হবে।
- তালাক দেওয়ার আগে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যথাযথভাবে প্রস্তুত করুন
- কাগজে কোন ভুল ত্রুটি থাকলে তালাক কার্যকর নাও হতে পারে
- তালাকে স্বাক্ষর এবং দূতাবাসে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র গুলো সত্যায়িত করুন
- মধ্যপ্রাছের বাইরে থাকলে সেখান থেকে তালাক দেওয়া যায়।
বিদেশ থেকে তালাক প্রদানের বিষয়টি অনেকটাই জটিল। তবে যদি সামর্থ্য থাকে অথবা আপনি যদি মনে করেন কিছুদিনের মধ্যে দেশে আসবেন তাহলে দেশে এসেই তালাক দেওয়া সব থেকে ভালো হয়। এতে করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তালাক সম্পন্ন করা যায়।
তবে দেশে আসা যদি সম্ভব না হয় তাহলে আপনারা মধ্যপ্রাচ্যের বাহিরের অন্য কোন দেশে থাকলে তাহলে সেখান থেকেও তালাক দিতে পারবেন। তবে এক্ষেত্রে সময় কিছুটা কম বেশি লাগতে পারে তবে তালাক কার্যকর হয়ে যাবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন